বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন দেশের শত শত মানুষ। রক্ত ঝরেছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর। সোনারগাঁয়ে দেয়ালে চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে তাদের স্মৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিবর্ণ অতীত মুছে দেওয়ালে দেওয়ালে ‘স্বপ্নলিপি’ আঁকছেন তাঁরা।
সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনকারীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা উপজেলার প্রাণ কেন্দ্র উপজেলা কার্যালয়ের সড়ক সংলগ্ন শহীদ মজনু পার্ক(বিজয় স্তম্ভ) সহ উপজেলার বিভিন্ন দেয়ালে রঙতুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছেন প্রতিবাদ, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও দেশপ্রেম এঁকে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার (১৫ই আগষ্ট) উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, নোংরা দেয়াল পরিষ্কার করে হাতের মাধুরী দিয়ে রংতুলির ছোঁয়ায় লেখার উপযোগী করা হয়। এরপর প্রতিবাদী বিভিন্ন বাক্য লেখা হয়। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দেয়ালে দেয়ালে বিভিন্ন শ্লোগান ও আলপনা করা হয়েছে। সেখানে বৈষম্য বিরোধী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার নানা চিত্র ফুটে উঠছে। তাদের এমন কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতি আগামী প্রজন্মের মাঝে জানিয়ে দিতেই তাদের এমন উদ্যোগ।
দেয়ালে চিত্রাঙ্কন করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা, পুরো উপজেলা পরিষ্কারসহ স্থানীয় বাজার মনিটরিং করছেন। তাদের এমন কর্মকান্ডে স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। শিক্ষার্থীরা জানান যতদিন রাষ্ট্র সংস্কার না হবে ততদিন তারা এমনভাবে কাজ করে যাবেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, সুন্দর একটি বাংলাদেশ আগামী প্রজন্মকে উপহার দেওয়ার জন্য আন্দোলনকারীদের কিছু স্মৃতি দেয়ালে অংকন করছি । আমরা দেশের কোন সম্পদ নষ্ট করি নাই। এখানে আমাদের সাথে অংশগ্রহণ করেছেন আমাদের শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ।
তারা আরও জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদ, মামলা প্রত্যাহার, দুর্নীতি প্রতিরোধ, গুম-আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও হল-ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবিতে দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচি শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সিয়াম হোসেন ও আয়েশা জাহান আমেনা দেয়াল লিখন ও চিত্রাংকন বিষয়ে বলেন, “ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে আমরা আমাদের বীর এবং শহীদ ভাইদের স্মৃতিচারণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে দেয়ালে চিত্রাংকন। আমাদের শহীদ ভাইদের প্রতিকৃতি, রক্ত লাল, স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা, স্বাধীনতার প্রতীক, নির্যাতিত ভাই-বোনদের হাহাকার এবং স্বৈরাচারী শ্বাসকের নানা ধরনের চিত্র তুলে ধরতে আমাদের এ চিত্রাংকন এবং দেয়ালে লিখন। আমরা এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বার্তা প্রেরণ করতে চাই। পরবর্তী প্রজন্ম যাতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং ২০২৪ এর ইতিহাস তারা বুকে ধারণ করতে পারে।”