সোনারগাঁকে ঘিরে নতুন ষড়যন্ত্র: সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তিতে অনিহা জানিয়ে কাঁচপুরবাসী

মুক্ত বাংলাদেশ
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫ | অক্টোবর ১০, ২০২৫ Last Updated 2025-10-10T12:35:54Z


নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ আবারও রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসনিক সীমানা পরিবর্তনের নামে সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের দক্ষিণাংশকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় বইছে। স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, যার উদ্দেশ্য সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্য, প্রশাসনিক স্বাতন্ত্র্য ও রাজনৈতিক ভারসাম্য ভেঙে দেওয়া।


সোমবার(৬ অক্টোবর) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার টি.এম. রাহসিন কবির স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরের দক্ষিণাংশকে সিটি করপোরেশনের আওতায় আনার বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়। চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। উপজেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্র এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে।


এই চিঠিকে কেন্দ্র করে কাঁচপুর ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার বিকেলে কাঁচপুর বাজারে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেন এবং গণসাক্ষর কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সোনারগাঁ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।“আমরা সোনারগাঁওবাসী, সিটি করপোরেশনে নয়”এই স্লোগান ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে এলাকা।


স্থানীয় সমাজসেবক বি.এম ডালিম বলেন,“সোনারগাঁ কেবল একটি উপজেলা নয় এটি ইতিহাসের অংশ, এটি ঐতিহ্যের প্রতীক। প্রশাসনিক স্বার্থে কিংবা ভোটের রাজনীতি করতে এসে যদি কেউ এই এলাকার মানচিত্র নিয়ে খেলা করতে চায়, আমরা তা মেনে নেব না। কাঁচপুর ছিল, আছে, থাকবে সোনারগাঁয়ের অংশ হিসেবেই।”


জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রুবেল হোসাইন বলেন, “এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করার গোপন পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে সোনারগাঁয়ের রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্য ধ্বংস করে কাঁচপুরকে সিটি করপোরেশনে নিয়ে গিয়ে তারা ভোটের মাঠে সুবিধা নিতে চায়।”


সোনারগাঁয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন,“এটি নিছক প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়। এর পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। আগে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনকে শুধুমাত্র সোনারগাঁ নিয়ে গঠন করা হয়েছিল, পরে রাজনৈতিক সুবিধার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জের কিছু অংশ যুক্ত করা হয়। এবার সেই একই কৌশলে কাঁচপুরকে সিটি করপোরেশনের আওতায় নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এটি জনগণের মতামতের প্রতি চরম অবজ্ঞা।”


অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক বরাবর কিছু প্রভাবশালী মহল কাঁচপুরের একাংশকে সিটি করপোরেশনে যুক্ত করলে নির্বাচনে নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীর জন্য ভোটের ভারসাম্য তৈরি হবে—এমন ধারণা থেকেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও প্রশাসন বিষয়টি অস্বীকার করছে, 


স্থানীয় ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান বলেন,“এলাকার উন্নয়ন চাই সবাই, কিন্তু এর নামে যদি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হয়, সেটা কখনো মেনে নেওয়া যাবে না। আমাদের সড়ক, ড্রেনেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবকিছু সোনারগাঁ প্রশাসনের অধীনে চলে। হঠাৎ করে সিটি করপোরেশনের আওতায় গেলে এই সব সেবার সমন্বয় ভেঙে পড়বে।”


এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা রাব্বি হোসেন বলেন,“নির্বাচনের সময় এলেই কিছু মহল সোনারগাঁয়ের মানচিত্র নিয়ে খেলা শুরু করে। এটি জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।”


কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাজী সেলিম হক রুমী বলেন,“আমরা দেখছি, নির্বাচনের আগে কিছু মহল নানা অজুহাতে সোনারগাঁকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। সিটি করপোরেশনে কাঁচপুর গেলে জনগণ সুবিধাবঞ্চিত হয়ে পড়বে। এক শ্রেণীর কুচক্রী মহল রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার হন্য সরাসরি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা চালাচ্ছে ।”



সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি চিঠি এসেছে। এটি কেবল প্রাথমিক তথ্য যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জনগণের স্বার্থবিরোধী কিছু হলে আমরা অবশ্যই তা উচ্চ পর্যায়ে জানাব।”


তবে জেলা প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এটি শুধুমাত্র নির্বাচনী কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা রয়েছে। মূল উদ্দেশ্য প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক।”


অন্যদিকে কাঁচপুর ইউনিয়নের তরুণ সমাজ, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একমত এই প্রস্তাব অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। তারা দাবি করেছেন, সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রশাসনিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় কাঁচপুরের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালাবে।


ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে“সোনারগাঁ এক ও অভিন্ন”প্রচারণা শুরু হয়েছে, যা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে। 


সোনারগাঁবাসীর ভাষায়“এই সিদ্ধান্ত শুধু কাঁচপুরের নয়, পুরো সোনারগাঁয়ের মর্যাদার প্রশ্ন।”তারা দৃঢ় কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো রাজনৈতিক স্বার্থে নয়—সোনারগাঁ থাকবে এক ও অভিন্ন, নিজের পরিচয় ও ঐতিহ্যের গর্বে অটুট।

Comments
মন্তব্য করার ক্ষেত্রে অনুগ্রহ পূর্বক অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ, গালিগালাজ, ব্যাক্তিগত আক্রমণ, নাম বিকৃত করা থেকে বিরত থাকুন।
  • সোনারগাঁকে ঘিরে নতুন ষড়যন্ত্র: সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তিতে অনিহা জানিয়ে কাঁচপুরবাসী

জনপ্রিয়